যখন দেশে ২০০০ শয্যার আইসিইউ হাসপাতাল নির্মান করা শুরু হলো দেশের পাতি মিডিয়া থেকে শুরু করে প্রধান সারির মিডিয়া পর্যন্ত তা ফলাও করে ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারের গুনগান প্রচার করা শুরু করলো। একই সাথে দুনিয়ার সকল নথিপত্র সহ কোন দেশ কয়দিনে, কতো টাকায় হাসাপাতাল বানিয়েছে মুহূর্তের মধ্যে ঘেটে বের করে করোনার বিরুদ্ধে, করোনাকে প্রতিহত করতে, আমরা করোনার থেকে শক্তিশালী(!?) তা ঘটা করে মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধু সেটেলাইট(!?) দিয়ে প্রচার করার হিড়িক পরলো এবং একমাত্র কেবল একমাত্রই বাংলাদেশ ২১ দিনে এতো বিশাল বড় হাসাপাতাল নির্মান করে বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছে!
তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে, এই হাসপাতাল করোনার সাথে লড়াই করতে আমাদের আরেকটু সাহস যুগিয়েছিল। ডাক্তারদের সহানুভূতি-আশ্বাসের জায়গা ছিল এই হাসপাতাল। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত-অদৃশ্য কারনে দেশের করোনা সংক্রমণ ততদিনে তরতর করে নিম্নমুখী হয়ে হাসপাতালের বেড পর্যন্ত করোনা রোগী শুন্যে নেমে আসলো। এই বিশেষায়িত বিশেষ সময়ে নির্মিত হাসপাতালটি তৎক্ষনাৎ আর কোনো কাজেই আসলো না। একাকী নিঃশব্দে নিঃসঙ্গতায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে জনশূন্য হয়ে পরে রইলো। মিডিয়া থেকে বুদ্ধিজীবী, সরকারি দল থেকে বিরোধীদল, বাম থেকে আমজনতা, নাস্তিক থেকে আস্তিক কেউই আর খবর রাখেনি এই হাসপাতালের। রাখবেও বা কিভাবে(!) দেশে যেখানে এতো এতো ইস্যু, এতো বিশ্ব রেকর্ডের রমরমা ব্যবসা সেখানে মাত্র ৩১ কোটি টাকা মামুলি ব্যাপার। নিছকই হাতের ময়লা।
ততদিনে আমজনতাও মাননীয় ওবায়দুল কাদেরের কথায় বিশ্বাস করা শুরু করেছে “আমরা করোনার থেকে শক্তিশালী!
সব ইস্যুর মতো আমরাও ভুলে গিয়েছি ইহধামে এই কিছুদিন আগেও করোনা ছিল, এখনো আছে শুধু সংক্রমণের হার কম। তবে যেখানে আমেরিকার মতো দেশ করোনায় আমাদের কাছে মেডিকেল সাহায্য চায়(?) উগান্ডা চায় ভ্যাক্সিন (?) সেখানে সেদেশের হর্তা-কর্তারা কিভাবে ভুলে যায় করোনা আবারও আসবে! এমন বিচক্ষণ কিন্তু নীলক্ষেতের বই পড়ুয়া বিসিএস আমলারা কিভাবে করোনা নীতি থেকে পিছু হটে? কিভাবেই বা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাক স্বাধীনতায় ভরপুর মিডিয়ার অন্তরালে-অভিসারে এতো বিশাল হাসপাতাল গায়েব হয়ে যায়? ২০ কোটি পক্ষান্তরে ৯০-৯৪% শতাংশের ইমানি, মুসলিম ভাইদের চর্ম চক্ষুর সামনে দিয়ে ৩১ কোটি টাকা সমানে লোপাট হয়ে যায়? বঙদেশের একটি কাক-পক্ষীও জানতে পারেনি গায়েব হওয়ার খবর? এই কথা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয়। মানতে আমি পারি না। পারবোও না। যেভাবে আপনারা মামুনুল হকের ‘মানবিক বিবাহকে’ কোনো অপরাধই মনে করেন নি, সমস্ত ফোন-কল বানোয়াট, মিথ্যা বলে ধিক্কার জানিয়েছেন ঠিক একই তরিকায়,ইমানি জজবায় “কেউ জানেনা” নীতিকে আমি অস্বীকার করলাম।
আজ যখন সাংবাদিকরা একটা হাতল কিংবা একটা বুম মন্ত্রী-আমলাদের সামনে এগিয়ে দিয়ে এই হাসপাতালের গায়েব হওয়া নিয়ে জিগ্যেস করে, অনুভূতি জানতে চায় তখন আমার মুখ ভরে হড়হড় করে বমি আসে, হাসি পায়।
যেখানে মিডিয়ার হাতে রাতারাতি অন্যের ব্যক্তিগত ফোন রেকর্ড, অন্যের বেড রুমের খবর অনায়াসেই চলে আসে সেখানে এমন জ্বলজ্যান্ত, বিশালাকার হাসপাতাল হাওয়া হওয়ার খবর নেই, বা ছিল না বিশ্বাস করা, মেনে নেয়া সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠে ঘটনার মতো।
এমন মাছুম, নির্বোধ, সাধা সিধে, স্কুলে-কলেজের প্রথম বেঞ্চ থেকে ধরে আনা সাংবাদিক আর তার সাংবাদিকতা দেখে আমি মনে মনে আওড়াতে থাকি “আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম!”
আব্দুল্লাহ আল-মামুন
তরুণ লেখক
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ
Leave a Reply