উক্ত নাগরিক সংলাপে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন এবং গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সংগঠক মুসা কলিমুল্লাহ, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সদস্য ফিরোজ আলী, আশরাফুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বোদা, বাপার পঞ্চগড় জেলার আহ্বায়ক অ্যাডঃ আবুল খায়ের আনোয়ারুল ইসলাম, ভজনপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মির্জা শফিকুল ইসলাম, কালের কন্ঠের সাংবাদিক লুৎফর রহমান, আরটিভির সাংবাদিক হারুন-অর-রশীদ, ভাসানী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাফর মুহাম্মদ, ‘স্বপ্নপূরণে আমরা’ সেচ্ছাসেবী সংগথনের সভাপতি মকলেসুর রহমান সহ পঞ্চগড়ের সাধারন নাগরিকবৃন্দ।
সংলাপটি পরিচারলনা করেন গণসংহতি আন্দোলন পঞ্চগড় জেলার আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান সাজু।
সভার শুরুতে ভাসানী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাফর মুহাম্মদ ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবসের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রচন্ড অসুস্থতা সত্ত্বেও মওলানা ভাসানী লং মার্চের আয়োজন করেন। এই লং মার্চের উদ্দেশ্য শুধু মাত্র মানুষের কল্যাণ ছিলনা বরং প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা এবং জীব বৈচিত্র্য রক্ষারও উদ্দেশ্যে এই লং মার্চের ডাক দেন বৃদ্ধ মওলানা ভাসানী। ফারাক্কা লং মার্চের ৪৫ বছরে আমরা দেখছি কি ভয়াবহ পরিস্থিতি হাজির হয়েছে আমাদের সামনে। পঞ্চগড়ের নদীগুলোর উজানে বাঁধ দেওয়ার ফলে এই অঞ্চলেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। নদী গুলো নাব্যতা হারানোয়, প্রবাহ ক্ষীণ হয়ে যাওয়ায় নদী কেন্দ্রীক অর্থনীতি, জীববৈচিত্র এবং সার্বিকভাবে আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি আজ হুমকির মুখে।
সংলাপে উপস্থিত বাপা’র পঞ্চগড় জেলার আহ্বায়ক অ্যাডঃ আবুল খায়ের আনোয়ারুল ইসলাম বলেন পঞ্চগড়ে একসময় ৪৬টি নদী ছিল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী ৩৩টি নদী ছিল যার বেশিরভাগ এখন ফসলি জমিতে রুপান্তরিত হয়েছে। টাঙ্গন, ছ্যাতনাই, হাতুড়ি সহ ৬টি নদীর উৎপত্তিস্থল পঞ্চগড়েই কিন্তু নদীগুলোর অস্তিত্ত্বই এখন খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। তিনি আরও বলেন, নদী খনন-শাসন-উন্নয়ন কিংবা রক্ষা যাই বলিনা কেন এর জন্য বাংলাদেশ সরকারের ২৭টি মন্ত্রনালয়ের দ্বারস্থ হতে হয় ফলে এ বিষয়ের কর্তৃপক্ষ একটি মাথাভারী সংগঠনে রুপান্তরিত হয়েছে। নদী কমিশন বলে একটি জিনিস থাকলেও তা কেবল একটি কাগুজে আইনের সংগঠন। নদীর সংকট সমাধানে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা এই সংগঠনের নেই। তিনি এও বলেন, পানির রাজনীতি বহু পুরোনো। ফলে এই সংকটের সমাধানও রাজনৈতিক।
সংলাপে উপস্থিত ভজনপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর ওপর অবৈধ দখলদারিত্বের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই। ডাহুক নদীর ওপর আনন্দধারা নামক প্রায় ব্যাক্তিগত বিনোদন কেন্দ্র, তালমা নদীর পাশে হিমালয় পার্কসহ বিভিন্নভাবে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ করে নদী ধ্বংস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নদীকে কেন্দ্র করে জীবন-বৈচিত্র সৃষ্টি হয়। জীবনের চিত্র তৈরী হয়। নদীর সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে নদী রক্ষাও সম্ভব হবে।
গণসংহতি আন্দোলন এবং গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সংগঠক মুসা কলিমুল্লাহ বলেন, নদী আমাদের কৃষি ব্যবস্থার প্রাণ। নদী ধ্বংসের সবচেয়ে বড় শিকার এদেশের কৃষক। নদীতে পানি না থাকায় সেচ প্রকল্প চালানো যাচ্ছেনা ফলে বোরো মৌসুমে কৃষক দ্বারস্থ হচ্ছে গভীর নলকুপের। এতে করে পানির স্তরও কমে যাচ্ছে। তিনি আরোও বলেন অপরিকল্পিত ড্রেজিং এর ফলে এবং পানির স্তরে শূণ্যতা তৈরি হওয়ার ফলে ভুমিধ্বস সৃষ্টি হতে পারে যা নাগরিক জীবনকে বিঘ্নিত হবে।
বোদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ফারাক্কা মার্চে অংশগ্রহনকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের মনের মধ্যে শংকা বা সংশয় থাকলে চলবে না। সরাসরি প্রতিবাদ জানাতে হবে। ২৭টি ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রনালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরলে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। আমাদের সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি জানাতে হবে।
সভার অন্যান্য বক্তাগণ, স্থানীয় সরকারের নিকট নদী রক্ষার নির্দেশনা জানানো, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চেষ্টা বাড়ানোসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেন।
সংলাপের সঞ্চালক এবং গণসংহতি আন্দোলন পঞ্চগড় জেলার আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, আমাদের সামনে এখন একমাত্র পথ আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়া। একই সাথে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থাও ভাবতে হবে। পঞ্চগড়ের আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে জলাশয় ভরাট করা বন্ধ করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে। নদী খনন এবং নদী শাসনের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধুমাত্র একশ্রেণীর সুবিধাভোগী মানুষের স্বার্থে সামগ্রিক মানুষ এবং অন্যান্য জীব বৈচিত্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলা যাবেনা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সমস্যা সমাধানের আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
Leave a Reply